Skip to main content

রুটি নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন

রুটির গুরুত্ব খ্রিস্টধর্মে আছে। পৌত্তলিক আচারেও রুটির গুরুত্ব আছে। ইংরেজদের দেশে টাকার আরেক নাম ব্রেড। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের সময় বলশেভিকরা শান্তি আর জমির সঙ্গে রুটিরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মৌলিক চাহিদা বোঝাতে ভারতবাসী কথায় কথায় রুটি, কাপড় আর ঘরের কথা বলে থাকে। আরিবা রেজা আজ রুটির কথা বলছেন: 

তৈরি হচ্ছে কিসরা। সুদান।

গবেষকরা রুটির উৎস খুঁজতে ৩০ হাজার বছর আগের আয়ারল্যান্ডে ফিরে যান। তখন পাথর যুগ। ওই সময় বুনো ঘাস থেকে শস্য সংগ্রহ করে দুই পাথরের মাঝখানে রেখে পেষা হতো। তারপর তা পানির সঙ্গে মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করা হতো। তারপর পাথরের থালায় করে আগুনে দেওয়া হতো। মিসরে ফারাওদের আমলের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। দুধ, মধু আর ফলমূল মিশিয়ে সুস্বাদু রুটি তৈরি করত মিসরীয়রা। তাদের ছিল গোলাকার মাটির চুলা। আর রোমানরা অনেক রকম গম চাষ করত। তারা বিভিন্ন গড়নের রুটি বানাতে বিভিন্ন রকম পাথরের ছাঁচ ব্যবহার করত। রুটি ফোলাতেও পারত। রোমান লেখক প্লিনি দ্য এল্ডার (২৩-৭৯ খ্রিস্টাব্দ) জানাচ্ছেন, গল আর আইবেরিয়ানরা বিয়ারের ফেনা ব্যবহার করে পাতলা এক রুটি বানানোর কৌশল জানত। আর নর্মানরা ১০৬৬ সালে ব্রিটেন দখল করল। তারা বড় বড় চুলা বানাতে জানত। বড় রুটিগুলো তারা থালা হিসেবে ব্যবহার করত। থালার ওপরের খাবার শেষ হওয়ার পর তারা থালাটিও খেয়ে ফেলত। মধ্যযুগে এসে ব্যবসায়ীরা বেকারি খুলে বসল। ব্যবসায়ীদের সংঘ রুটির ওজন ও মানের দিক খেয়াল রেখে মূল্য নির্ধারণ করল। ওই সময় ময়দার মিল মালিকরা স্টিল রোলার ব্যবহার করে ভালো ময়দা তৈরির কায়দা শিখে ফেলেছিল। মধ্যযুগের ইউরোপের প্রধান খাবার ছিল রুটি। ছয় ইঞ্চি বাই চার ইঞ্চি মাপের রুটি তখন অনেক পাওয়া যেত। উনিশ শতকের শেষাশেষি ব্রিটিশরাজ উপনিবেশগুলো থেকে রুটি আমদানিতে উৎসাহ জুগিয়েছে।
এ পর্যায়ে এসে এখন একটি নাম বলতে হয়—অটো ফ্রেডরিখ রোয়েডার। ১৯১২ সাল। রোয়েডার ব্রেড স্লাইস করার একটি যন্ত্র বানানোর কোশেশ করছিলেন। ১৯২৮ সালে গিয়ে রোয়েডারের মেশিন রুটি টুকরো (স্লাইস) করতে যেমন পারত, কাগজে মুড়েও দিতে পারত। মিসৌরির একটি বেকারি মেশিনটি প্রথম বড় পরিসরে ব্যবহার শুরু করে। ১৯৬১ সালে রুটির জগতে আরেকটি পরিবর্তন আসে। এটি কর্লেউড ব্রেড প্রসেস নামে খ্যাত। কর্লেউডের ব্রিটিশ বেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন ওই পরিবর্তন আনে। এখন  যেমন খুশি তেমন গড়নের, তেমন রঙের, তেমন গন্ধের যে রুটি মিলছে তা ওই কর্লেউডের অবদান।

দেশে দেশে রুটি
জাপানের মিষ্টি স্বাদের বনরুটির নাম অনপন। কেরালার লোকে রাতে আর সকালে যে রুটি খেতে পছন্দ করে, তার নাম আপ্পাম। চীনের মিষ্টি স্বাদের ভারী একটি রুটির নাম বাবা। পোল্যান্ডের ইহুদিরা আংটির মতো গড়নের রুটি খেতে পছন্দ করে, তার নাম বাগেল। পোল্যান্ডে আরো পাওয়া যায় ক্রিসমাস ওয়েফার। যিশু বা মেরির প্রতিকৃতি আঁকা থাকে এতে। তিব্বতের লোক বার্লির গুঁড়া থেকে তৈরি যে রুটি খায়, তার নাম বালেপ করকুন। জ্যামাইকানরা নারিকেলের দুধে ভেজে বাম্মি খায়। ইরান আর আফগানিস্তানে জনপ্রিয় বারবারি রুটি। বর্বর গোষ্ঠীগুলো এ রুটির আবিষ্কর্তা। লিবিয়ায় লবণ পানিতে বার্লি গুলে যে রুটি তৈরি হয় তার নাম বাজিন। দুই সেন্টিমিটার পুরু তুরস্কের রুটির নাম বাজলামা। পর্তুগালে মিষ্টি আলু থেকে তৈরি রুটির নাম বোলো দো কাকো। রাশিয়ার খুব ভারী একটি রুটির নাম বরডিনস্কি। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই চালু আছে চাপাতি। খুব পাতলা হয়। গমের আটা বা ময়দা দিয়ে তৈরি হয়। মসুর ডাল, সবজি, মুরগি বা খাসির গোশত দিয়ে খাওয়ার চল আছে। মাখন দিয়ে ভেজে গোলাকার চিলিয়ান রুটির নাম হালুলা। পাঞ্জাবের কুলচা তৈরি হয় আলুভর্তা দিয়ে। প্রচুর পেঁয়াজ আর মরিচ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে ঘি বা তেলে ভাজা পরোটার অনেক চল আছে। পিত্জাও কিন্তু এক ধরনের রুটি। পাপড়ও তাই। রুমালের মতো পাতলা বলেই নাম রুমালি রুটি। ময়দায় তৈরি হয়। উত্তর ভারতে চলে বেশি। ইরানের ঐতিহ্যবাহী একটি রুটি শিরমাল। জাফরান গন্ধি এ রুটিতে দুধের ব্যবহার হয়। সুদানি রুটির নাম কিসরা। দুনিয়ার প্রায় সব দেশেই রুটি বা ব্রেডের চল আছে। শুধু দেশভেদে ধরন আলাদা।     

একটি রুটির যাত্রা
১৮৪৫ সালে ভারত থেকে ত্রিনিদাদে অভিবাসন শুরু হয়। পরের ৭২ বছর ধরে চলতে থাকে। আফ্রিকা থেকে আনা দাসেরা, যারা আগে থেকেই দ্বীপে বসবাস করছিল, ভারতীয়রা তাদের সঙ্গে ভাষা, পোশাক মায় খাবারও ভাগাভাগি করতে থাকল। বিশেষ করে তাওয়ার খুব চল হলো। রুটি তৈরি হতে থাকল অনেক। ঝাল তরকারিও চালু করে দিল ভারতীয়রা। রুটি-তরকারি জনপ্রিয় হলো। তারপর ১৯৪০ সালের দিকে চালু হলো শর্মা স্টাইলের রুটি। মানে রুটির ভেতরে সবজি বা গোশত পোরা থাকে। এটা একটি প্যাকেটের মতো হয়, সাধারণত চারকোনা। এখন ত্রিনিদাদি রুটি  আমেরিকা আর ইংল্যান্ডেও জনপ্রিয়। 

আমাদের একটি রুটি    
পরোটা, রুমালি রুটি, চালের রুটি, আটার রুটিসহ অনেক রকম রুটিই আমাদের দেশে চলে। তবে রাজশাহী অঞ্চলের কলাই রুটির বিশেষ নাম আছে। জাতায় পেষা কলাই আর আতপ চালের আটা মিলিয়ে এ রুটি তৈরি হয়। একটু ভারী হলেই খেতে ভালো হয়। বেগুনভর্তা, ধনেপাতার চাটনি বা মরিচের চাটনি দিয়ে গরম গরম খুব স্বাদ করে খায় লোকে।

Comments

Popular posts from this blog

Laaibah Ruti Maker - লাইবা রুটি মেকার নিয়ে বিশেষ ভিডিও প্রতিবেদন

অটোমেটিক Rotimatic মেশিনে রুটি বানান ১ মিনিটে : Rotimatic for rute or chapaty

রুটি নাকি ভাত- কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর?

রুটি কিংবা ভাত ছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের খাবার গ্রহণই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। যদিও ভাত বেশি প্রচলিত। আমাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় থাকা নানা উপাদেয় খাবার তৈরিতে ভাত ও রুটি- দুটোই ব্যবহৃত হয়। শরীরের ওজন হ্রাসে অনেকে খাবারের ডায়েটারি কার্বোহাইড্রেট ত্যাগ করার কথা বলেন। কিন্তু ভাত ও রুটি আমাদের খাবার তালিকায় এমনভাবে মিশে আছে যে তা বাদ দেওয়া কঠিন। তবে একটি প্রশ্ন দেখা দেয়, শরীরকে ফিট রাখতে দুই খাবার আইটেমের ভেতর কোনটি বেশি উপযোগী। রুটি তৈরি হয় গমের আটা থেকে। চাল প্রস্তুত হয় রাইস মিলে ধান থেকে তুষ বা খোসা ছাড়িয়ে তা পালিশ করার মাধ্যমে। অনেকে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়ার অজুহাত দিয়ে ভাত বাদ দেওয়ার কথা বলেন। আবার অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ভাত রুটির চেয়ে হালকা খাবার। এ কারণে ভাতকেই বেছে নেওয়া উচিত। যাইহোক, সত্যটি হলো উভয় খাবারই শরীরে প্রায় একই ধরনের প্রভাব ফেলে। নিচে উভয়ের কয়েকটি খাদ্য বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো :  চাল ও রুটিতে রয়েছে একইরকম কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালোরি মান। চাল ও রুটিতে গ্লাইসেমিক সূচক একই। যার অর্থ হলো এই যে উপকরণ দুটো একইভাবে শরীরের  রক্তচাপ...